bd flag

বাংলা

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

সাবা (সাবা)

সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তার মালিক। আর আখিরাতেও সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবগত।

তিনি জানেন যমীনে যা প্রবেশ করে এবং তা থেকে যা বের হয়; আর আসমান থেকে যা নাযিল হয় এবং তাতে যা উঠে। আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল।

আর কাফিররা বলে, ‘কিয়ামত আমাদের কাছে আসবে না।’ বল, ‘অবশ্যই, আমার রবের কসম! যিনি গায়েব সম্পর্কে অবগত, তা তোমাদের কাছে আসবেই। আসমানসমূহ ও যমীনে অনু পরিমাণ কিংবা তদপেক্ষা ছোট অথবা বড় কিছুই তাঁর অগোচরে নেই, বরং সবই সুস্পষ্ট কিতাবে রয়েছে,

যাতে তিনি প্রতিদান দেন তাদেরকে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। তাদেরই জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক।

আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা চালায়, তাদেরই জন্য রয়েছে কঠোর পীড়াদায়ক আযাব।

আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানে যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্য এবং তা মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথের দিকে হিদায়াত করে।

আর কাফিররা বলে, ‘আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে, তোমরা যখন পুরোপুরি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে তখন নিশ্চয় তোমরা নতুনভাবে সৃজিত হবে’?

সে কি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, না কি তার পাগলামী রয়েছে? বরং যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে না তারা আযাব ও সুদূর বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।

তারা কি তাদের সামনে ও তাদের পেছনে আসমান ও যমীনে যা আছে তার প্রতি লক্ষ্য করে না? যদি আমি ইচ্ছা করি তাহলে তাদেরকে সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আসমান থেকে এক খন্ড [আযাব] তাদের উপর নিপতিত করব, অবশ্যই তাতে রয়েছে আল্লাহমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য নিদর্শন।

আর অবশ্যই আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। [আমি আদেশ করলাম] ‘হে পর্বতমালা, তোমরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর’ এবং পাখিদেরকেও [এ আদেশ দিয়েছিলাম]। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম,

[এ নির্দেশ দিয়ে যে,] ‘তুমি পরিপূর্ণ বর্ম তৈরী কর এবং যথার্থ পরিমাণে প্রস্তুত কর’। আর তোমরা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।

আর সুলাইমানের জন্য আমি বাতাসকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আর আমি তার জন্য গলিত তামার প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছিলাম। আর কতিপয় জিন তার রবের অনুমতিক্রমে তার সামনে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয় তাকে আমি জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন করাব।

তারা তৈরী করত সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউযের মত বড় পাত্র ও স্থির হাড়ি। ‘হে দাঊদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ’।

তারপর যখন আমি সুলাইমানের মৃত্যুর ফয়সালা করলাম তখন মাটির পোকা জিনদেরকে তার মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল, যা তার লাঠি খাচ্ছিল। অতঃপর যখন সে পড়ে গেল তখন জিনরা বুঝতে পারল যে, তারা যদি গায়েব জানত তাহলে তারা লাঞ্ছনাদায়ক আযাবে থাকত না।

নিশ্চয় সাবা সম্প্রদায়ের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল একটি নিদর্শন: দু’টি উদ্যান, একটি ডানে ও অপরটি বামে, [তাদেরকে বলা হয়েছিল] ‘তোমরা তোমাদের রবের রিয্ক থেকে খাও আর তাঁর শোকর কর। এটি উত্তম শহর এবং [তোমাদের রব] ক্ষমাশীল রব’।

তারপরও তারা মুখ ফিরিয়ে নিল। ফলে আমি তাদের উপর বাঁধভাঙ্গা বন্যা প্রবাহিত করলাম। আর আমি তাদের উদ্যান দু’টিকে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দু’টি উদ্যানে যাতে উৎপন্ন হয় তিক্ত ফলের গাছ, ঝাউগাছ এবং সামান্য কিছু কুল গাছ।

সে আযাব আমি তাদেরকে দিয়েছিলাম তাদের কুফরীর কারণে। আর আমি অকৃতজ্ঞ ছাড়া অন্য কাউকে এমন আযাব দেই না।

আর তাদের ও যে সব জনপদের মধ্যে আমি বরকত দিয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তীস্থানে আমি অনেক দৃশ্যমান জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং তাতে ভ্রমণ করার ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। [তাদেরকে বলা হয়েছিল] ‘তোমরা এসব জনপদে রাত-দিন [যখন ইচ্ছা] নিরাপদে ভ্রমণ কর’।

কিন্তু তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমাদের সফরের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দিন’। আর তারা নিজদের প্রতি যুলম করল। ফলে আমি তাদেরকে কাহিনী বানালাম এবং তাদেরকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে।

আর নিশ্চয় তাদের ব্যাপারে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণ করল, ফলে মুমিনদের একটি দল ছাড়া সবাই তার অনুসরণ করল।

আর তাদের উপর শয়তানের কোন কর্তৃত্ব ছিল না। তবে কে আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে আর কে তাতে সন্দেহ পোষণ করে তা প্রকাশ করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। আর তোমার রব সকল কিছুর হিফাযতকারী।

বল, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়।

আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কারো উপকার করবে না। অবশেষে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় বিদূরিত হবে তখন তারা বলবে, ‘তোমাদের রব কী বলেছেন’? তারা বলবে, ‘সত্যই বলেছেন’ এবং তিনি সুমহান ও সবচেয়ে বড়।

বল, ‘আসমানসমূহ ও যমীন থেকে কে তোমাদেরকে রিয্ক দেন? বল, ‘আল্লাহ’, আর নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা সৎপথে প্রতিষ্ঠিত অথবা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত’।

বল, ‘আমরা যে অপরাধ করছি সে ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না, আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমাদেরকেও জিজ্ঞাসা করা হবে না’।

বল, ‘আমাদের রব আমাদেরকে একত্র করবেন। তারপর তিনি আমাদের মধ্যে সঠিকভাবে ফয়সালা করবেন। আর তিনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী ও সম্যক পরিজ্ঞাত’।

বল, ‘তোমরা আমাকে দেখাও তো, তোমরা যাদেরকে তাঁর সাথে শরীক হিসেবে যুক্ত করেছ [তারা কোন সত্তা?] কখনো নয়, বরং তিনিই আল্লাহ, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।

আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না,

আর তারা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে’?

বল, ‘তোমাদের জন্য রয়েছে একটি দিনের ওয়াদা যা থেকে তোমরা মুহূর্তকাল বিলম্বিত করতে পারবে না আর তরান্বিতও করতে পারবে না’।

আর কাফিরগণ বলে, ‘আমরা কখনো এ কুরআনের প্রতি ঈমান আনব না এবং এর পূববর্তী কোন কিতাবের প্রতিও না’। আর তুমি যদি দেখতে যালিমদেরকে, যখন তাদের রবের কাছে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে তখন তারা পরস্পর বাদানুবাদ করতে থাকবে। যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা অহঙ্কারীদেরকে বলবে, ‘তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিন হতাম’।

যারা অহঙ্কারী ছিল তারা, তাদেরকে বলবে, যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল, ‘তোমাদের কাছে হিদায়াত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বাধা দিয়েছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী’।

আর যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা, যারা অহঙ্কারী ছিল তাদেরকে বলবে, ‘বরং এ ছিল তোমাদের দিন-রাতের চক্রান্ত, যখন তোমরা আমাদেরকে আদেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অস্বীকার করি এবং তাঁর সমকক্ষ স্থির করি’। আর তারা যখন আযাব দেখবে তখন তারা অনুতাপ গোপন করবে। আর আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরিয়ে দেব। তারা যা করত কেবল তারই প্রতিফল তাদেরকে দেয়া হবে।

আর আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করলেই সেখানকার বিত্তবান অধিবাসীরা বলেছে, ‘তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ অবশ্যই আমরা তা প্রত্যাখ্যানকারী’।

তারা আরো বলেছে, ‘আমরা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অধিক সমৃদ্ধশালী। আর তাই আমরা আযাবপ্রাপ্ত হব না’।

বল, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’

আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন বস্তু নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে, তারাই তাদের আমলের বিনিময়ে পাবে বহুগুণ প্রতিদান। আর তারা [জান্নাতের] সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।

আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করে দিতে প্রচেষ্টা চালায় তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে।

বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিয্কদাতা।’

আর স্মরণ কর, যেদিন তিনি তাদের সকলকে সমবেত করবেন তারপর ফেরেশতাদেরকে বলবেন, ‘এরা কি তোমাদেরই পূজা করত?’

তারা [ফেরেশতারা] বলবে, ‘আপনি পবিত্র মহান, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা জিনদের পূজা করত। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত’।

ফলে আজ তোমাদের একে অপরের কোন উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা কেউ রাখবে না। আর আমি যালিমদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর যা তোমরা অস্বীকার করতে।’

আর যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হত তখন তারা বলত, ‘এতো এমন এক ব্যক্তি যে তোমাদের বাধা দিতে চায় তা থেকে যার ইবাদাত তোমাদের পিতৃপুরুষগণ করত’। তারা আরও বলে, ‘এটি বানোয়াট মিথ্যা বৈ কিছু নয়।’ আর কাফিরদের নিকট যখনই সত্য আসে তখন তারা বলে, ‘এতো কেবল এক সুস্পষ্ট যাদু।’

আর আমি তাদেরকে কোন কিতাব দেইনি যা তারা অধ্যয়ন করত, এবং তোমার পূর্বে তাদের প্রতি আর কোন সতর্ককারীও প্রেরণ করিনি।

আর তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছে। অথচ আমি তাদের [পূর্ববর্তীদের] যা দিয়েছিলাম এরা তার এক দশমাংশও পায়নি, তবুও তারা আমার রাসূলদের অস্বীকার করেছিল। ফলে আমার প্রত্যাখ্যান [শাস্তি] কেমন হয়েছিল?

বল, ‘আমি তো তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’জন অথবা এক একজন করে দাঁড়িয়ে যাও, অতঃপর চিন্তা করে দেখ, তোমাদের সাথীর মধ্যে কোন পাগলামী নেই। সে তো আসন্ন কঠোর আযাব সম্পর্কে তোমাদের একজন সতর্ককারী বৈ কিছু নয়।’

বল, ‘আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি, বরং তা তোমাদেরই। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকট এবং তিনি সব কিছুর উপরই সাক্ষী।

বল, ‘আমার রব সত্য পাঠিয়েছেন। তিনি যাবতীয় গায়েব সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।’

বল, ‘সত্য এসেছে এবং বাতিল কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, আর কিছু পুনরাবৃত্তিও করতে পারে না।’

বল, ‘যদি আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাই তবে আমার অকল্যাণেই আমি পথভ্রষ্ট হব। আর যদি আমি হিদায়াত প্রাপ্ত হই তবে তা এজন্য যে, আমার রব আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও অতি নিকটবর্তী’।

আর যদি তুমি দেখতে যখন তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে তখন পালানোর কোন পথ পাবে না এবং নিকটস্থ স্থান থেকে তাদেরকে পাকড়াও করা হবে।

আর তারা বলবে, ‘আমরা তাতে ঈমান আনলাম’। কিন্তু দূরবর্তী স্থান থেকে তারা কিভাবে ঈমানের নাগাল পাবে?

অথচ তারা ইতঃপূর্বে তা অস্বীকার করত এবং তারা দূরবর্তী স্থান থেকে গায়েব সম্পর্কে কুটমন্তব্য ছুঁড়ে মারত।

আর তাদের ও তারা যা কামনা করত তার মধ্যে অন্তরাল করে দেয়া হবে, যেমন ইতঃপূর্বে তাদের সমগোত্রীয়দের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল। নিশ্চয় তারা ছিল বিভ্রান্তিকর সন্দেহে পতিত।